ক) কর্মশালার সারবস্তু:
মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নাগরিক উদ্যোগ এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত “প্রস্তাবিত নগর আদালত আইনের প্রয়োজনীয়তা, আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। প্রস্তাবিত নগর আদালত আইন বিষয়ে মতবিনিময় এবং স্থানীয় সরকার কাঠামোর আওতায় বিরোধ নিষ্পত্তি সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের অবগত করার লক্ষ্যে উক্ত কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল প্রস্তাবিত নগর আদালত আইন বাস্তবায়নে সাংবাদিকগণ যাতে জনগণ সহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। এছাড়া এর মাধ্যমে এসডিজির ১৬ নম্বর ধারা সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় উক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করবে। কেননা, প্রস্তাবিত নগর আদালত আইন বাস্তবায়ন হলে নগরে বসবাসরত এক কোটি ষাট লক্ষেরও বেশি মানুষ খুব সহজেই আইনী সুবিধা পাবে। এতে প্রচলিত আদালতে মামলার জটও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরগণকে প্রাথমিক বিচার করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে এবং এর পরিধি দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। তবে, আলোচকগণের কেউ কেউ সন্দিহান যে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরগণ যেহেতু রাজনৈতিক ভাবে নির্বাচিত, সেহেতু তারা প্রভাবমুক্ত হয়ে আদৌ নিরপেক্ষ বিচার করতে পারবে কি না! তবে, খসড়া প্রণয়নকারীগণ জানিয়েছেন যেহেতু সিটি কর্পোরেশনকে কেন্দ্র করেই উক্ত আইনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, ফলে কাউন্সিলরগণকে উক্ত প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে, উক্ত আইনের কার্যক্রম শুরু হলে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরবর্তীতে এ বিষয়ক সংশোধনীর জন্যে আলোচনা করা যেতে পারে। তবে, প্রস্তাবিত আদালতের আর্থিক পরিসর নিয়ে এখনো চিন্তাভাবনার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া খসড়া আইনে উল্লেখিত বেশ কয়েকটি ধারা (যেমন: গবাদি পশু, নাবালকের স্বার্থ, বেআইনি সমাবেশ, পুরুষ কাউন্সিলর, সরকারি কর্মচারি, আদালত অবমাননা ইত্যাদি)-এর যৌক্তিকতা যাচাই করা প্রয়োজন। আয়োজক প্ল্যাটফর্ম আগামী দিনগুলোতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সাথে মত বিনিময় করে উক্ত আইন বিষয়ে সকলের পরামর্শ গ্রহণ ও যাচাই করে খসড়া আইনটি পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা হবে। সবশেষে তা কার্যকর বাস্তবায়নে সরকারের সাথে অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে, যেখানে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকগণ অন্যতম অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবেন বলে আয়োজকগণ আশা প্রকাশ করেছেন।
খ) কর্মশালা পরিচিতি:
বিগত ১১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (বøাস্ট), নাগরিক উদ্যোগ এবং সিটিজেনস প্ল্যাটফর্মস ফর এসডিজিস, বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে “প্রস্তাবিত নগর আদালত আইনের প্রয়োজনীয়তা, আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় করণীয়” শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় উদ্বোধনী ও সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফজলুল হক। সভা সঞ্চালনা করেন মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইব্রাহিম মিয়া এবং সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট খান মোহাম্মদ শহীদ। গ) শুভেচ্ছা বক্তব্য:
অ্যাডভোকেট ফজলুল হক মতবিনিময় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি অতিথিদের উদ্দেশ্যে বলেন:পৌরসভার জন্য আইন থাকলেও এর কোন কার্যকরীতা নেই। আমরা যদি পেছনের দিকে তাকাই, ব্রিটিশ আমলে ১৮৭০ সালে স্থানীয় ্িবচার ব্যবস্থাকে চালু করার জন্যে প্রথম আইন প্রণয়ন হয়েছিল। এরপর একসময় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ছিল। ১৯১৯ সালের দিকে ছিল ইউনিয়ন বোর্ড। তখন ইউনিয়ন বোর্ডের প্রধান কাজই ছিল ন্থানীয় পর্যায়ে বিচার সালিশ করা। এরপর আসল পৌরসভা। তখন তারা পৌর আইন প্রণয়ন করল, এর মধ্যে স্থানীয় বিচার ব্যবস্থাকেও অন্তর্ভূক্ত করল। কিন্তু তা কার্যকর করার জন্যে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো না। আপনারা জানেন, বেশ কিছুদিন পূর্বে আমরা গ্রাম আদালত ব্যবস্থাকে চালু করার জন্যে কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। যা বাস্তবায়নের জন্যে সরকার এখন বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটাকে নি:সন্দেহে একটা ভাল রকমের যাত্রা বলা যায়। বর্তমানে ৩৩০ টির মতো পৌরসভা আছে। এরপর উক্ত পৌরসভাগুলোতে কিভাবে উক্ত আইনটি কার্যকর করা যায় তা নিয়ে আমরা কিছু কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে আমরা উল্লেখযোগ্য কোন সাড়া পাই নি। কারণ, আপনারা জানেন পৌরসভায় যারা নির্বাচিত হয়ে আসছে, তারা সবাই রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। তারা রাজনৈতিক কর্মকান্ডেই বেশি যুক্ত থাকে বিধায় তাদেরকে পাওয়া যায় না। তবে, উক্ত আইনটি কার্যকর করার বিষয়ে আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আবার বলা হলো ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ স্থানীয় পর্যায়ে নিষ্পত্তি করার জন্যে, কিন্তু এর জন্যে কোন আইন নেই।
আপনারা জানেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ বস্তিতে বসবাস করে। আদালতে গিয়ে মামলা চালানোর মত কোন সামর্থ্য তাদের নেই। আপনারা সাংবাদিকরা জানেন, বর্তমানে মামলা পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এটা ঠিক যে, আমাদের দেশে দীর্ঘ সময় ধরে সালিশী ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। আমাদের যারা বয়োবৃদ্ধ ও মুরুব্বীগণ বিচার সালিশ করত তারা কখনোই পক্ষপাতিত্ব করত না। তারা সুষ্ঠু বিচার পরিচালনা করত। কিন্তু, সেই ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা বর্তমানে আমরা ধরে রাখতে পারি নি। এমনকি এর জন্যে আমাদের কোন প্রচেষ্টাও নেই। কিন্তু, সারা বিশ্বেই এখন সালিশের নতুন ধরন আবির্ভূত হয়েছে। যেখানে উভয় পক্ষই জয়ী হতে পারে। সালিশকারগণ উভয়পক্ষকে আলাপ আলোচনা করতে সহায়তা করে। সালিশকার কোন সিদ্ধান্ত দেবেন না। বিবাদমান দুই পক্ষ নিজেরাই আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আইনের শাসন শুধু আদালতেই নয়, এখন স্থানীয় বিচার ব্যবস্থায়ও আইনের শাসনের ধারণা যুক্ত হয়েছে। ফলে, বিবাদমান পক্ষরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে একই রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে বসবাস করতে পারে, সে চিন্তা থেকেই আমরা প্রস্তাবিত নগর আদালত আইন কার্যকর করার জন্যে আমাদের পদক্ষেপসমূহ শুরু করেছি। আপনারা গণমাধ্যম কর্মীগণ আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে সবাইকে এ বিষয়ে অবগত করবেন, জনগণকে সজাগ করবেন। গ্রাম আদালত আইনে বিচার করার পরিধি এখন ৭৫০০০ টাকা, কিন্তু পৌর আইনে তা এখনো ২৫০০০ টাকাই রয়ে গেছে। বরং এটা হওয়া উচিত দুই লক্ষ টাকা। আপনারা এ বিষয়ে জনমত গঠনে সহায়তা করবেন।
ঘ (১). মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা:
প্রোগ্রামে মূল প্রবন্ধ উপন্থাপনাকারী অ্যাডভোকেট খান মোহাম্মদ শহীদ প্রোগ্রামের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশিত ফলাফল সম্পর্কে উপস্থিত সাংবাদিকদের অবহিত করেন। প্রবন্ধ উপস্থাপক বলেন, মূলত প্রস্তাবিত নগর আদালত আইন বিষয়ে মতবিনিময় এবং স্থানীয় সরকার কাঠামোর আওতায় বিরোধ নিষ্পত্তি সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের অবগত করার লক্ষ্যেই উক্ত প্রোগ্রামটি আয়োজন করা হয় যাতে প্রস্তাবিত নগর আদালত আইন বাস্তবায়নে সাংবাদিকগণ ্জনগণ সহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। এছাড়া আজকের প্রোগ্রামের আলোচনা ন্যায় বিচার ও আইন শাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত এসডিজির ১৬ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সহায়ক হবে। এরপর, প্রবন্ধ উপস্থাপক অ্যাডভোকেট খান মোহাম্মদ শহীদ মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের বেশ কিছু সাফল্য তুলে ধরেন। বিশেষ করে সংস্থার ভিশন, মিশন এবং বিভিন্ন কর্মকান্ড সম্পর্কে উপস্থিত সাংবাদিকদের অবগত করেন। তিনি বলেন: মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এন্ড অ্যাসোসিয়েশন সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাচ্ছে। সর্বশেষ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রস্তাবিত নগর আদালত ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়। তিনি বলেন: বর্তমানে দেশে নগরের বিচার ব্যবস্থার জন্যে গ্রাম আদালত বা পৌর বোর্ডের এর মতো আলাদা কোন আইন নেই। ফলে, উক্ত বিষয়ে একটি আইন প্রণয়নের জন্যে একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
ঘ (২). নগর আদালত আইনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত প্রবন্ধ উপস্থাপনা:
নগর আদালত আইনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত উপস্থাপনায় প্রবন্ধ উপস্থাপক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইব্রাহিম মিয়া বলেন: অভিজ্ঞতায় দেখা যায় মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা, হয়রানি ও অর্থ ব্যয়ের কারণে জনসাধারণ সালিশযোগ্য/আপোষযোগ্য বিরোধসমূহ স্থানীয় পর্যায়ে নিষ্পত্তি করতে বেশি আগ্রহী। উক্ত বিষয়সমূহ স্থানীয় পর্যায়ে মীমাংসা করার জন্যে গ্রাম আদালত ২০০৬ ও বিরোধ মীমাংসা (পৌর এলাকা) বোর্ড আইন ২০০৪ প্রণয়ন করা হয়েছে। উক্ত আইনসমূহ থাকার কারণে জনগণ আদালতে না গিয়ে কম খরচে, স্বল্প সময়ে এবং হয়রানি মুক্তভাবে নিজেদের বিরোধ মীমাংসা করতে পারছে। কিন্তু আইনী কাঠামো না থাকার কারণে সিটি কর্পোরেশনে বসবাসরত জনগণ উক্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রবন্ধ উপস্থাপক অতিথিদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, বাংলােেদশের আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা অনেক। বিশেষ করে নগর এলাকায় মামলার জট অনেক বেশি। এমনকি বিচারক প্রতি মামলার সংখ্যাও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় বিচার প্রার্থীগণ আর্থিক ক্ষতি সহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। এমনকি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি এবং আইনমন্ত্রীও বিদ্যমান বাস্তবতা অনুধাবন করে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। উপস্থাপক জানান দেশে বর্তমানে ১২ টি সিটি কর্পোরেশনে এক কোটি ষাট লক্ষেরও বেশি মানুষ বসবাস করে। অথচ উক্ত জনগোষ্ঠীর বিরোধ স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার কোন আইনগত কাঠামো প্রণয়ন করা হয় নি। যা এসডিজির ১৬ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা পূরণের অন্তরায়। ফলে, উক্ত জনগোষ্ঠীকে বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্যে একটি আইনগত কাঠামো প্রণয়ন জরুরি, যা নগর আদালত আইন হিসেবে পরিচিত হতে পারে। এরপর প্রস্তাবিত খসড়া আইনের বিভিন্ন ধারা ও উপধারা উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে শেয়ার করা হয়।
ঙ) মুক্ত আলোচনা পর্ব:
মেয়র, মাদারীপুর পৌরসভা: মাদারীপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও মেয়র উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন: আপনারা সকলে প্রস্তাবিত নগর আদালত আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনসচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা পালন করবেন। আমাদের দেশে আদালতের বিচার ব্যবস্থায় অনেকেই ভরসা রাখতে পারেন না, বিশেষ করে যখন নি¤œ আদালতের বিচার উচ্চ আদালতে বাতিল হয়ে যায়। ফলে, জনগণের ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে এ আদালত গঠণ ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন জরুরি। আপনারা এ বিষয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন।
খসড়া আইনটি উপস্থাপন হওয়ার পর আইনটির উপর বেশ কিছু মতামত ও প্রশ্নের উথ্থাপন করেন উপস্থিত সাংবাদিকেরা । তা নি¤œরুপ ঃ
আশরাফুল আলম – কালের কন্ঠ
• প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় কাউন্সিলরের নিকট অভিযোগ দায়েরের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু, একজন সাধারণ নাগরিকের কাউন্সিলের নিকট সহজেই পৌঁছাতে পারবে না। এ জন্যে তাদের অনেক বিড়ম্বনায় পরতে হবে বলে আমার ধারণা। আইনজীবি নিয়োগ না করা সংক্রান্ত বিধান সম্পর্কে আমিও একমত যেহেতু এতে মামলা খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু এখানে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, কাউন্সিলরগণ অনেক সময় রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হয়ে কাজ করেন। অন্যদিকে, আইনী কাঠামোতে না থাকলেও কাউন্সিলরগণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো বিচার সালিশ করে থাকেন। ফলে, আমি সন্দিহান তারা কতটা প্রভাবমুক্ত ভাবে বিচার পরিচালনা করবেন। আর প্রস্তাবিত নগর আদালত যদি কোন জরিমানা করে, আর তা আদায়ের জন্যে পিডিআর অ্যাক্টের মাধ্যমে যদি আদায়ের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে কিন্তু আবার আইনজীবির প্রশ্ন এসে যায়। ফলে, আমি মনে করি পিডিআর অ্যাক্ট এখানে সংযুক্ত করা ঠিক হবে না।
• আমাদের দেশে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন রয়েছে। প্রাক্তন আইনমন্ত্রী ব্যরিস্টার শফিক আহমেদ উক্ত আইনটিকে কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তার সময়ে আইনে অনেকগুলি সংশোধনীও তখন আনা হয়েছিল। ফলে উক্ত আইনের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন সহ বাংলাদেশের যে কোন স্থানে বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায় কি না? যদি উক্ত আইনের মাধ্যমে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়, তাহলে তা প্রস্তাবিত আইনের সাথে কোন বিরোধ তৈরি করবে কি না?
• এডিআরে বলা হয়েছে ৯০ দিনের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে নগর আদালতে মীমাংসা না হলে তা আবার নিয়মিত কোর্টে বিশেষত সহকারি জেলা জজের কোর্টে নিষ্পত্তির জন্যে প্রেরণ করা হবে, সেখানে নিষ্পত্তি না হলে জেলা কোর্টে মামলা স্থানান্তর হবে। এমনকি প্রয়োজনে হাইকোর্টেও যাবে। এর মাধ্যমে তো নতুন করে মামলা জট তৈরির এবং মামলা দীর্ঘসূত্রী হবার ঝুঁকি তৈরি হল। ফলে, এক্ষেত্রে মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা আপনারা পুর্নবিবেচনা করবেন কিনা? পাশাপাশি নগর আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হলে সরাসরি জেলা কোর্টে প্রেরণ করলে ভাল হবে।
মিল্টন আনোয়ার- ৭১ টিভি
• জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা থাকে। তারা কীভাবে বিচারকের ভ‚মিকা পালন করবে?
• দ্বৈত ভ‚মিকা পালন করতে হবে। একদিকে জনপ্রতিনিধি অন্যদিকে বিচারকের দায়িত্ব পালন।
• সাচিবিক দায়িত্ব কে পালন করবে?
• কাঠামোগত ব্যবস্থাপনা ও জনবল এবং তাদের বেতন ভাতা কোথা হতে যোগান হবে?
• দুই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর একত্রিত করা সম্ভব হবে কী না?
• কাউন্সিলররা দলীয় লোকজন ও ভোটার দ্বারা প্রভাবিত হয় সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ভংগ হয় কী না? ক্ষতিপূরণ ও জরিমানা পিডিআর এক্ট এর আওতায় না করে অন্য কোন বিধান দ্বারা আদায় করা যায় কী না ?
আলমগীর হোসেন- যুগান্তর
• খসড়া আইনটিতে কারাদন্ডের সুযোগ রাখা হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ এর বিধান রাখা হয়েছে। কর্পোরেশন এলাকাগুলোতে অনেক ভাসমান ও অস্থায়ী ঠিকানার মানুষ বসবাস করে। তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত ঘোষিত হলে তারা যদি পালিয়ে যায় তাহলে কীভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যাবে।
মোঃ সাইদুল ইসলাম, জিটিভি
• আমার জানামতে বাংলাদেশে বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি আইন আছে। সে আইনের আওতায় এই আইনটি আনা যায় কী না ?
বোরহানুল আশেকিন প্রিন্স – চ্যানেল ২৪
• স্থানীয় সরকারের বর্তমান আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনে দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতিক নিয়ে মেয়র কাউন্সিলরগণ নির্বাচিত হন তাদের মাধ্যমে বিচারে নিরপেক্ষতা কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে?
• তারা বিচারক হিসেবে শপথ নিবেন কী না ?
• ১২০ দিনের মধ্যে বিরোধেল নিস্পত্তি না হলে কী হবে?
• আমাদের আইন ও সংবিধানের অধীনে বিচার ব্যবস্থা বিকেন্দ্রিকরণের সুযোগ আছে কী না?
আজিজুল ইসলাম পান্নু – দীপ্ত টিভি
• পৌরসভার বিরোধ নিস্পত্তি আইন কে কার্যকর করার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং তার অভিজ্ঞতা কেমন?
• নগর আদালত আইনটি জনগনের কল্যানে ভ’মিকা রাখতে পারবে বলে মনে হচ্ছে।
• আদালতের এখতিয়ার আড়াই লক্ষ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বেশী হবে কী না?
• এই আইনটি প্রনয়নে সরকারের সাথে কোন আলোচনা শুরু হয়েছে কী না ?
মুহাম্মদ ইয়াছিন- দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট
• এ আইনে এডিআর প্রক্রিয়া রয়েছে তা ৯০ দিনের মধ্যে নিস্পত্তি করতে পারলে ভালো হবে। এ আদালতরে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল জজ কোর্ট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা ভালো। হাইকোর্টে এর আপীল গেলে তাতে মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়বে।
মাশহুদুল হক, এটিএন নিউজ
• আমাদের দেশে ১২ টি সিটি কর্পোরেশন রয়েছে, সেখানকার মেয়র এবং কাউন্সিলরগণ কি প্রস্তাবিত আইনটির খসড়া সম্পর্কে কোন ধরনের মতামত দিয়েছেন? আমার মনে হয় যদি ১২ টি সিটি কর্পোরেশন এক যোগে এ আইনটি বাস্তবায়নের দাবি তোলে, তাহলে এ আইন বাস্তবায়নে ৬ মাসের বেশি সময় লাগবে না। কিংবা উক্ত সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রতিনিধিদেরও যদি প্রস্তাবিত আইন সম্পর্কে কোন প্রস্তাবনা থাকে সেটা বিবেচনায় নেওয়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
• আইনটির উপর সরকারের কোন মতামত নেওয়া হয়েছে কী না? খসড়া অঅইনটির বিষয়ে তাদের মতামত কী? তারা কোন ফীডব্যাক দিয়েছেন কী না?
মনিরুজ্জামান মিশন – নিউএজ
• গ্রাম আদালতের কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের ভ‚মিকা কেমন? নগর আদালত কে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা কী চোখে দেখেছে? গ্রাম আদালত থেকে মানুষ কী কী সুবিধা পাচ্ছে?
• গ্রাম আদালতে আমাদের যে লোকাল স্টেকহোল্ডারগণ রয়েছেন তারা আইন বাস্তবায়নে কোন সহযোগীতা করেছেন কি না? এছাড়া নগর আদালত আইনটি এতদিনেও কেন কার্যকর হলো না?
ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট: আপনারা ইতোমধ্যে গ্রাম আদালত নিয়ে কাজ করেছেন। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে কিছুটা হলেও সুরাহা পাওয়া যাচ্ছে। গ্রাম আদালত থেকে বিচার প্রার্থীগণ কি ধরনের সুবিধা পেয়েছেন এটা যদি আজকে শেয়ার করা হয় তাহলে ভাল হয়। এখানে কোন কোন মামলা গুলো আসছে? প্রস্তাবিত নগর আদালত কোন কোন অপরাধের বিচার নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে হয়? তফসিলে গবাদি পশু সম্পর্কিত একটি বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে। এটা কি সত্যিই নগরের জন্যে প্রাসঙ্গিক কোন ইস্যু?
এছাড়া তফসিলে ফৌজদারি মামলার যে তালিকা সেখানে বেআইনি সমাবেশের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। বেআইনি সমাবেশ বিষয়টি এখানে ঠিক কি কারনে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে? আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, আপনারা বলেছেন কিছু কিছু মামলা নগর আদালতে আসবে না, যেমন: নাবালকের স্বার্থ সম্পর্কিত মামলা। এ বিধানটির যৌক্তিকতা আসলে কি? ৭ ধারায় বলা হয়েছে কোন ওয়ার্ডের পুরুষ কাউন্সিলর দায়িত্ব পালনে অসমর্থ্য হলে, এখানে পুরুষ কাউন্সিলরকে আলাদা করে উল্লেখ করার যৌক্তিক কারন আসলে কি? আদালত অবমাননার বিষয়ে বলা হয়েছে ১০০০ টাকা জরিমানা। এটির পরিমান খুবই কম, অনেকের কাছেই এটা কোন বিষয় নয়। ফলে, তারা আদালত অবমাননা করবে। নগর আদালতে আইনজীবি থাকবে না উল্লেখ করেছেন। গ্রাম আদালতে আইনজীবি না থাকা বিষয়ক অভিজ্ঞতা কি? আরেকটি বিষয় বলেছেন সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা হলে বিশেষ অনুমোদন নিতে হবে। এটা আমার কাছে খুবই আপত্তিজনক একটি ধারা মনে হয়। যদিও সরকারের দিক থেকে এটি সংযুক্ত হবেই, তবুও মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে আমাদের এটি বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।
শামীমা আক্তার, বিশেষ প্রতিনিধি, আরটিভি:
ব্রিটিশ আমলে আমরা জুরি ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি। এছাড়া এখন ৪৫৫৯ টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত রয়েছে এবং মামলা নিষ্পত্তিতে উক্ত আদালতের এখতিয়ার ৫০০০০ টাকা পর্যন্ত রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে এর পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে গ্রাম আদালত ব্যবস্থা অনেকটাই সফল। ফলে আমি মনে করি নগরে ছোট ছোট যে বিরোধগুলি হয় তা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিবাদমান পক্ষগুলি তাদের পরিচিত গন্ডিতেই বিচারের জন্যে আসবে। ফলে তা সফল হবে, যেহেতু পরিচিতদের মধ্যে বিচার হবে, সবাই সবাইকে চেনে এবং ঘটনার বিস্তারিত সকলেই জানে। তবে নগর আদালতের এখতিয়ার আড়াই লাখ থেকে বৃদ্ধি করে ফৌজদারি অপরাধের ধরনগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে আমিমনে করি নগর আদালত গ্রাম আদালতের চেয়েও সফল হতে পারে। এছাড়া নগর আদালত মামলার জট কমাতেও সহায়তা করবে বলে আমি মনে করি। এটি দেশ এবং বিচারাঙ্গনের জন্যেও সফল একটি পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হবে। মানুষ এর সুফল ভোগ করবে।
ডেইজি আফরোজ, কাউন্সিলর, মাদারীপুর পৌরসভা
পৌরবোর্ড আইন ২০০৪ আইন ছিলো প্রাকটিস ছিল না। এমএল্এএ আমাদেরকে প্রশিক্ষন দিয়েছে। ফলে আইন সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি । এমএল্এএ থেকে মাদারীপুর পৌরসভায় একজন প্রতিনিধি দেওয়া হয়েছল ছিল সে পৌরসভায় আমাদের সাথে সপ্তাহে / মাসে সভা করতো। সেখানে আইন ও অন্যন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো। আমরা দেখেছি পৌর বোডের্র আওতায় ১০০টি বিরোধের মধ্যে ৮০ / ৮৫টি বিরোধ স্বল্প সময়ে হয়রানী ব্যতিত সফলভাবে নিস্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও আপনার জানেন কোর্ট থেকে কিন্ত প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে বেশ কিছু মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য পাঠানো হয়। এখানে কোর্ট কিন্ত জনপ্রতিনিধিদের উপর আস্থা রাখছে। জনপ্রতিধিরেদ জন্য আইন বিষয়ে প্রশিক্ষনগুলো চলমান রাখা দরকার। পৌরসভায় আইনটি সংশোধন হওয়া দরকার এবং আইনটি বাস্তবায়নে রাষ্ট বা সরকারের জনবলের অভাব রয়েছে তা পূরণ করা দরকার।
সাইদা সালমা, প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর, মাদারীপুর পৌরসভা
নারীরা অবহেলিত পরর্নিভরশীল। নারীরা এখনও ইভটিজিং, বহু বিবাহ যৌতুক ইত্যাদিসহ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার। নারীরা বিরোধে জড়িয়ে পড়লে আদালতে যেতে হয়। সেখানে না গিয়ে যদি পৌরসভা কীংবা স্থানীয় বিচার ব্যস্থার নিকট যায় তাহলে সুন্দর সমাধান পায়। আদালতে গেলে নারীরা বিভিন্ন হয়রানী সম্মুখীন হয়। আর্থিক ক্ষতি সময়ের অপচয় হয়। তারা নিজেরা কোর্টে কথা বলতে পারে না। কিন্ত পৌর বোর্ডে আসলে সহজে নিজের কথা বলতে পারে। এখানে নারী বিচারক থাকে নারীরা তাদের কাছে সব কিছু খুলে বলতে পারে। আমি মনে করি সহজে বিচার পাওয়ার জন্য গ্রাম আদালত ও পৌরবোর্ডকে আরো আধুনিক ও গতিশীল করা প্রয়োজন। আগে যে মোড়লরা বিচার করতেন তাদের থেকে মেয়র কউন্সিলর রা খারাপ অবস্থায় নাই। আগে মোড়ল রা বা বাদী বিবাদীর কথা না শুনে বিচার করে ফেলতেন। এখন কাউন্সিলর, মেয়রগন কিন্ত উভয় পক্ষের কথা শুনে থাকে। কাউন্সিলররা বিভিন্ন দল হতে আসে এটা সত্য তবে আমি বলবো মানুষ যখন বিচারগদের আসনে বসে সেক্ষেত্রে সে সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করে ন্যায় বিচার দেয়ার। আমরা যদি তর্ক বিতর্কে না গিয়ে সকলে একমত পোষন করতে পারি যে, আদালতের বিচােেরর চাইতে স্থানীয় বিচার ব্যবস্থা ভালো।
এ্যাডভোকের ওবায়দুর রহমান খান
মাদারীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন সভাপতি
মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতি
আমরা যদি পৃথিবীতে সভ্যতার ক্রমবিকাশ লক্ষ্য করি তাহলে দেখবো আদালতের বাহিরেও বিচার ব্যবস্থার একটি পদ্ধতি ছিল। এ পদ্ধতি ক্রম বিকশিত হয়েছে । সত্যিকার বিচার পাওয়ার জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার । আমাদের দেশে এখনও সামাজিকভাবে সালিশ ব্যবস্থা চলে এসেছে। গ্রাম আদালত ও নগর আদাতের বাহিরেও এখন আমাদের সমাজে অনেক ব্যাক্তি আছেন যারা সালিশের মাধ্যমে বিরোধ নিস্পত্তি কার্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকেন। জনপ্রতিনিধিদের বিচার করা নিয়ে কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। ভোটের কথা ভেবে কোন কোন জনপ্রতিনিধি বিচার কাজে বিব্রত বোধ করেন। কিন্ত আমি মনে করি তিনি যদি ব্যক্তিত্ববান হন বিচক্ষন হন তাহলে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন। আমাদের সংবিধানে ন্যায় পালের একটি পদ আছে । নগর আদালতের সংগে ন্যায় পালকে সংযুক্ত করা যেতে পারে। ন্যায় পালের নিয়ন্ত্রনে নগর আদালত হতে পারে। ন্যায় পাল নিয়োগে দিয়ে তাদের আওতায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, শিক্ষক অন্যন্য সূধীজনদেরকে প্রশিক্ষন দিয়ে কউন্সিলদের সাথে যুক্ত করে নগর আদালত পরিচালনা করা যেতে পারে।।
চ) প্রশ্নোত্তর পর্ব:
জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ: সবার আলোচনায় আমরা দেখতে পাচ্ছি কেউ প্রস্তাবিত নগর আইনের গুরুত্ব অস্বীকার করছি না। এটি ইতিবাচক দিক। তার মানে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রথমত, অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, গ্রামে যে বিচার সালিশ ব্যবস্থা রয়েছে। তা সত্যিই একটি কার্যকর ব্যবস্থা। দ্বিতীয়ত, আমাদের গ্রাম আদালত ও আর্বিট্রেশন কাউন্সিল। ফলে এটি যদি থাকে তাহলে কেন নগরের দুই কোটি মানুষ এবং ১২ টি সিটি কর্পোরেশন একই সুবিধা পাবে না? তৃতীয়ত, নগরে মানুষের মধ্যে কি ধরনের বিরোধ হয়ে থাকে সে বিষয়ে একটি গবেষণা হওয়া দরকার। এটা আমাদের দূর্বলতা যে এ ধরনের একটি অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করতে আমাদের যে পরিমান গবেষণা তথ্য থাকা দরকার তা আমরা করতে পারি নি। কারণ, আমরা এতগুলো মেয়র ও কাউন্সিলরদের মতামত জানতে পারি নি এবং বিরোধের সুনির্দিষ্ট ধরণ সমূহ সম্পর্কেও অবগত নই। তবে, একটি বিষয় সবাই স্বীকার করবেন, আমরা নগরে যারা ভাড়া বাড়িতে থাকি, সেখানে যখন বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হয়, বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত আইনে আমরা যেতে পারি না। কিন্তু ভাড়াটিয়া যদি স্থানীয়ভাবে এর জন্যে বিচারের জন্যে যেতে পারত, তবে বিষয়টি সফলভাবে নিষ্পত্তি হত। এখন প্রশ্ন আসে, জনপ্রতিনিধিগণ রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত কিংবা বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের পৃথক রাখার বিষয়টি সামনে আসে। কিন্তু আমি মনে করি এটি নেই। বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ একত্রিত হয়ে গেছে। আজকে ইউনিয়ন পরিষদে যারা রাজনৈতিক পরিচয়ে নির্বাচিত হচ্ছেন, তারাই তো আবার গ্রাম আদালতে বিচার করছেন। ফলে এই ধরনের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কেন বিচারক হবে, এটি নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু ১৯৭৬ সালে যে অর্ডিনেন্সটি আসল, ৪২ বছরেও এটির কোন বাস্তবায়ন নেই। যখন মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন কতগুলো রিফর্ম এ্যাজেন্ডা নিয়ে আসল, সরকার এবং একটি দাতা সংস্থাকে এ বিষয়ে রাজি করানো হলো, তখন প্রায় ১২০০ ইউনিয়নে গ্রাম আদালত বাস্তবায়ন করে দেখা গেল এটি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এ ধরনের একটি ভাল সিস্টেম চালুর মাধ্যমে কিন্তু পাবলিক বেনিফিট পায়।
আমরা আইন কমিশনে গিয়েছি। তারা আমাদের প্রস্তাবনা দিল: আমরা যেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বলি। আমরা অবশ্যই মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলব। আমরা ধারাবাহিকভাবে ক্যাম্পেইন শুরু করেছি। আমরা সমাজে উক্ত আইনের ডিম্যান্ড তৈরি করার জন্যে প্রথমেই আপনাদের শরণাপন্ন হয়েছি। ইতোমধ্যে আইন কমিশন আমাদের জানিয়েছে, আমরা এ বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনার চিন্তা-ভাবনা করছি। এ বিষয়ে তারা মাদারীপুর লিগ্যাল এইউ’কে ইতোমধ্যে একটি চিঠিও দিয়েছে। আমরা পরর্তীতে কাউন্সিলরদেরকে নিয়েও বসতে চাই। আর আইন কার্যকর করবে সরকার। তবে, সরকারকে এ বিষয়ে সহযোগীতা করতে আমরা বেসরকারী সংস্থা এখানে যুক্ত হয়েছি। রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত এসকল জনপ্রতিনিধিদের আমরা দুর্নীতিপরায়ন আখ্যা দিয়ে তা ছেড়ে দিতে পারি না। এখন কাউন্সিলররের অফিস খুব একটা কার্যকর নয়, এমনকি এখন জন্ম নিবন্ধনও কাউন্সিলরদের অফিস থেকে দেওয়া হয় না। ফলে আমরা যদি এ আইন টি কার্যকর করতে পারি, তাহলে সিটি কর্পোরেশনের কাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টিও সামনে আসবে, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের জন্যে স্থায়ী কার্যালয় স্থাপন সহ আরো অন্যান্য কার্যাবলির সাথেও তাদেরকে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এছাড়া, আইন কমিশন আমাদেরকে বলেছে , গ্রাম আদালত আইন, পৌর বিরোধ নিষ্পত্তি আইন এবং প্রস্তাবিত নগর আদালত আইন, এ তিনটি ভিন্ন আইন আসলে দরকার রয়েছে কি না! এ তিনটিকে একীভূত করা যায় কি না? এটা অবশ্য সেকেন্ডারি স্টেপ। আর খসড়া আইনের বিভিন্ন ধারায় যে সকল অসামঞ্জস্যতা রয়েছে তা নিয়ে আমরা আগামী দিনে কাজ করব।
খান মোহাম্মদ শহীদ: যদি আমরা আইনটি সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করতে চাই তাহলে সিটি কাউন্সিলরগণ যেভাবেই নির্বাচিত হোক না কেন তাদেরকে সম্পৃক্ত করতেই হবে। খসড়া আইনের ভাল দিক হচ্ছে পক্ষ দ্বয় কাউন্সিলর ছাড়াও নিজের পছন্দ মত বিচারক বাছাই করতে পারবেন। এ বিষয়গুলো গ্রাম আদালত ও প্রৌর আইনের মধ্যেও অনÍর্ভূক্ত রয়েছে। আমরা আপাতত শুরু করেছি। এটা যখন বাস্তবায়নে যাবে তখন হয়তো বাস্তবতা বিবেচনা করে কিছু বিষয় সংযোজন ও বিয়োজন করা যেতে পারে। নারী কাউন্সিলরের উপস্থিত থাকার বিষয়টি খসড়া আইনে স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। আর এডিআরের সাথে এ আইনটির সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কোন আশংকা নেই। কেননা, এটি একটি ভিন্ন আইন। রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত কাউন্সিলরগণ যথাযথ বিচার করবেন কি না তা আইন কার্যকর না হওয়ার আগে স্পষ্টভাবে বুঝা যাবে না। নির্দিষ্ট সময়সীমায় বিরোধ মীমাংসা না হলে কি হবে সেটা আইনে আরো স্পষ্ট করতে হবে।
আদালতের এখতিয়ার বিশেষত টাকার অঙ্কটি প্রচলিত আদালতের সাথে সাংঘর্ষিক হবে কি না তা নিয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনে সংশোধনী আনব। আর আমরা মনে করছি, আপিলের জন্যে প্রথমেই কোর্টে না গিয়ে যদি সিটি কর্পোরেশনে এটা মীমাংসার সুযোগ রাখা হয় তাহলে বোধ হয় ভাল হয়। সরকারি কর্মচারী সম্পর্কিত বিধানটি নিয়ে নাগরিক সমাজও সংক্ষ্দ্ধু। এটি নিয়েও আমরা পুনরায় চিন্তাভাবনা করব। আর আইনে আদালত অবমাননার পশ্নটি আসলে থাকবে কি না, আর থাকলে কত হবে, এটা নিয়ে আমাদের আরো আলোচনা করতে হবে। আমরা পরবর্তীতে আইনটি নিয়ে মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাথেও বসব। ইতোমধ্যে আমরা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাথে মত বিনিময় করেছি। এছাড়া আমরা এনজিও, সুশীল সমাজ এবং আইনজীবিদের সাথেও এ বিষয়ে মত বিনিময় করেছি। ধারাবাহিকভাবে আমরা পলিসি মেকারদের সাথেও আলোচনায় বসব।
ছ) অভিজ্ঞতা বিনিময়:
• সরকার ২০০৪ সালে যে পৌর আইনটি প্রণয়ন করেছে, কিন্তু এর কোন বাস্তবায়ন ছিল না। মাদারীপুর লিগ্যাল এইড উক্ত আইনটি কার্যকর বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমাদের কাজের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগণ আইনগুলি সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। আইনের বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে তারা জানতে পারে। জনগণকেও আমরা এ বিষয়ে সচেতন করি। মাদারীপুর পৌরসভায় পৌর বিরোধ নিষ্পত্তিতে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হযেছিল। প্রকল্পের স্টাফ সহ আমরা বিভিন্ন এলাকায় পৌর বিরোধ নিষ্পত্তি আইন বিষয়ে আমরা জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি উক্ত এলাকায় ৮০-৮৫ ভাগ মামলা উক্ত প্রকল্পের আওতায় সফলভাবে মীমাংসা করা সম্ভব হয়। কখনো কখনো আদালতও কিছু কিছু মামলা তদন্তের জন্যে আমাদের নিকট বা মেয়রের নিকট প্রেরণ করে। মেয়র মহোদয় এ বিষয়ে কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলরদেরকে দিয়ে বোর্ড গঠন করে দেয়। আর কাউন্সিলরদের জন্যে এ ধরনের প্রশিক্ষণ চলমান রাখা উচিত। কারণ যিনি নতুন নিবাচিত হয়ে আসবেন তিনি হয়তো এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকবেন না। এছাড়া, আইন বাস্তবায়নে অবশ্যই অবকাঠামোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে, অবকাঠামো কিন্তু পৌরসভাতেও নেই। পাশাপাশি লোকবলের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
• যুগ যুগ ধরেই নারীরা অবহেলিত। সমাজে বিভিন্নভাবে নারীদেরকে অন্তর্মুখী করে রাখা হয়েছে। এতে নারীরা পরনিরর্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি, পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন মামলা হয়। আমি মনে করি এ মামলাগুলি নিষ্পত্তির জন্যে আইনের কাঠগড়ায় না দাড়িয়ে যদি স্থানীয় বিচার ব্যবস্থায় এসকল বিষয়গুলোকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়, তাহলে আমি মনে করি নারীরা সহজেই যথাযথ বিচার পাবে। কেননা, নারীরা আদালতে বিচারের জন্যে গেলে আর্থিক হয়রানি সহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়। পাশাপাশি, সময়েরও অপচয় হয়। পৌর আদালত সহ স্থানীয় বিচার ব্যবস্থায় নারীরা নির্ভয়ে মন খুলে কথা বলতে পারে। এখানে নারী প্রতিনিধি থাকে বিধায় নারী ভিকটিম সহজেই কথা বলতে পারে। আগে যে মোড়লগণ বিচার সালিশ করত, মেয়র কাউন্সিলরগণ নিশ্চয়ই তাদের থেকে খারাপ নয়। মেয়র এবং কাউন্সিলরগণ কিন্তু উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেই বিরোধের উৎস চিহ্নিত করেন এবং বিরোধ নিষ্পত্তি করেন। তারা ন্যায় বিচার দেওয়ার চেষ্টা করেন, এখানে কোন রাজনৈতিক পরিচয় ও মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোন বিচার পরিচালনা করা হয় না।
• বিচার ব্যবস্থায় অনেক বিষয় নিয়ে পশ্ন থাকে বা কিছু বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। ফলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে। একটা সময় এখানে সালিশী ব্যবস্থা ছিল। এখনো তা আছে। গ্রাম আদালত, নগর আদালতের বাইরেও সমাজে যারা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক তাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা থাকে তারা যেন জনসাধারণের বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। এতে অনেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক সামাজিক সচেতনতার অংশ হিসেবে এধরনের কাজে সাড়া প্রদান করেন। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও গ্রাম আদালত কাজ করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ন্যায়পাল নিয়োগ দিয়ে উক্ত ন্যায়পালের নিয়ন্ত্রণে নগর আদালত প্রতিষ্ঠা করা হোক। আর, আমি মনে করি একজন কাউন্সিলরের অধীনে এ বিচার ব্যবস্থা ছেড়ে দিলে বিচার কার্যক্রম পক্ষদুষ্ট হতে পারে। কেউ কেউ ভোট সংখ্যা হিসেব করেও সঠিক রায় প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে পারে। ফলে, এখানে বিচারক প্যানেল রাখার সুযোগ থাকলে ভাল হয়।
• স্থানীয় মাতব্বরগণ যে সালিশ বিচার করেন, অনেক সময় তার কোন আইনগত ভিত্তি থাকে না। আবার বিচার না পেয়ে বিচার প্রার্থী থানায় বা কোর্টে চলে যায়। ফলে, বিচার প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়। আমরা কাউন্সিলরদের নিয়ে আইনী সভা করে থাকি। পাশাপাশি, উপকারভোগীদের নিয়েও সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকি। অনেকেই আমাদের কাছে সালিশ মীমাংসার জন্যে আসে। আজকের আলোচনা আসলে আইন ও বিচার ব্যবস্থা নয়। মোটাদাগে, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে সালিশ মীমাংসা। ফলে, আমি মনে করি প্রস্তাবিত নগর আদালত আইনটি দ্রæত বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।
জ) বিশেষজ্ঞ মতামত:
নূর খান লিটন, সেক্রেটারি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক): প্রশ্ন আসতে পারে, একজন মানবাধিকার কর্মীর কাছে প্রস্তাবিত আইনের প্রয়োজনীয়তা আসলে কী? আমি মনে করি দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষকে আমরা একটি সহজলভ্য বিষয় থেকে বাদ রেখেছি। আবার আরো কিছু মানুষ রয়েছে, যেখানে আইন রয়েছে, কিন্তু তার কোন কার্যকরীতা নেই। অন্যদিকে, গ্রামীণ সমাজে এ বিষয়টি কার্যকর ভূমিকা রাখছে। যার শিক্ষা আমরা সিটি কর্পোরেশনে অব্যাহত রাখতে চাই। এ প্রস্তাবটি এমন একটি সময়ে উত্থাপন করা হয়েছে, যখন প্রায় চল্লিশ লক্ষ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। আমরা মানবাধিকার কর্মীগণ, সাংবাদিকগণ এ বিষয়ে বারবার সোচ্চার হচ্ছি। সংবাদমাধ্যমের লেখনীতে আসছে মামলার জটের কারণে মানুষ বিচার পাচ্ছে না। এটা এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি। আমি মনে করি এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ফলে সমাজে যে নিষ্পত্তিযোগ্য সাধারণ বিরোধগুলি রয়েছে, এ বিরোধগুলি যাতে সহজ উপায়ে নিষ্পত্তি করা যায় সে চেষ্টা থেকে প্রস্তাবিত নগর আদালত আইন বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ দুই কোটি মানুষ, যাদেরকে আমরা বিচারের বাইরে রেখেছিলাম, তাদেরকে কিভাবে বিচারের আওতায় আনা যায়। আমিও মনে করি, মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে আমাদের সরকারি কর্মচারী সংক্রান্ত বিধানটি এখানে যুক্ত করা যৌক্তিক হবে না।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন
অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট:
৮৮ সালে আমি মাদারীপুর এসেছিলাম, তিন মাস মাদারীপুর কাটিয়েছিলাম। আগে জানতাম আইন মানে সংবিধান, আইন মানে মানবাধিকার, আইন মানে মৌলিক অধিকার। তখন ধারণা হয় নি, আইন মানে বিরোধ নিষ্পত্তি, মাঠ পর্যায়ের কাজ। যারা আমরা আইন ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি তারা জানি অ্যাডভোকেট ফজলুল হক হলেন মাদারীপুর লিগ্যাল অ্যাইড অ্যাসোসিয়েশনের অগ্রদূত। মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন ৭০ এর দশকে যাত্রা শুরু করে। তখন দেশে মার্শাল ল জারি ছিল। তখন আইনের শাসন ছিল না। সে সময়ে তিনি ছোট্ট আঙ্গিকে মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন এর কার্যক্রম শুরু করেন। অ্যাডভোকেট ফজলুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে নিজের শহরে ফিরে এসে জনসাধারণকে বিনা পয়সায় আইনী সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেন। এটি তার ব্যতিক্রমী ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে একটি দিকনির্দেশনামূলক উদ্যোগ ছিল। তিনি তার কাজে বার অ্যাসোসিয়েশনকে সম্পৃক্ত করেন। তিনি একাধিকবার বারের সেক্রেটারি এবং পরবর্তীতে সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভূক্তভোগীদের সাথে কথা বলে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি আদালতের বাইরে বসে করে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এটা তিনি সবাইকে বুঝালেন যে, কিছু কিছু বিরোধ আদালতের বাইরেও নিষ্পত্তি করা যায়। গ্রাম্য সালিশ ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে তিনি ভিন্ন ভাবে সালিশ পরিচালনা করার ধারণা প্রণয়ন করেন, যেখানে আইন বিষয়ে প্রশিক্ষিত ব্যক্তির সামনে বিবাদমান পক্ষদ্বয় আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সে প্ল্যাটফর্ম অনুসরণ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বøাস্ট, ব্র্যাক প্রমুখ সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালু করেছে।
পরবর্তীতে, সরকারি আইন সহায়তা সংস্থাও একই পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজ শুরু করেছে। মূলত, দেশে আইন সহায়তা কার্যক্রম বিস্তারে বিশাল অবদান রেখেছেন। আজকে যে আমরা নগর আদালত নিয়ে কথা বলছি, এটাও মূলত ওনার একটি উদ্যোগ। তিনি মনে করেছেন, গ্রাম আদালত এর অনুকরণে নগরেও এ ধরনের একটি আদালত হতে পারে। আরব্রিটেশন কাউন্সিল কে কার্যকর করার বিষয়েও তিনি নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এছাড়া, আমাদের সুপ্রিম কোর্টে যে কয়েকটি মৌলিক মানবাধিকার বিষয়ক রায় হয়েছে, সেগুলোতেও জনাব অ্যাডভোকেট ফজলুল হক এর অবদান রয়েছে। যেমন: ৫৪ ধারার মামলা সংক্রান্ত রায়, নারী ও শিশু আইনের আলোচিত শুক্কুর আলীর মামলা, লঞ্চ ডুবিতে ক্ষতি পূরণ আদায় সংক্রান্ত মামলা । আপনারা অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সাহেব ও মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন এর ভূমিকা নিয়ে দেশবাসীকে অবহিত করবেন বলে আশা প্রকাশ করছি।
মো: জাকির হোসেন,
প্রধান নির্বাহী নাগরিক উদ্যোগ
আমাদের পরবর্তী করণীয় নিয়ে পরবর্তীতে আমরা মাঝে মাঝে আপনাদের সাথে বসতে পারি। সেটা ট্রেনিং বা অন্যকোন ভাবেই হোক। এ বিষয়ে আমরা আপনাদের প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে কিছু প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করতে পারি। এটা আমার পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা।
ঝ) সমাপনী বক্তব্য:
মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সেক্রেটারি জনাব অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মত বিনিময় সভার আনুষ্ঠানিক সমাপিÍ ঘোষণা করেন।
ঞ) পরামর্শ/সুপারিশ:
মত বিনিময় সভায় প্রাপ্ত প্রধান প্রধান পরামর্শ/সুপারিশসমূহ :
১. সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং কাউন্সিলরদের সাথে প্রস্তাবিত আইন বিষয়ে মত বিনিময় করা এবং তাদের সুপারিশ ও পরামর্শ মূল্যায়ন করা;
২. প্রস্তাবিত নগর আদালত আইন বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সাথে অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করা;
৩. প্রস্তাবিত নগর আদালত আইনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সংবাদ মাধ্যম কর্তৃক জনমত গঠন করা;
৪. আর্থিক জরিমানা আদায়ে পিডিআর অ্যাক্টকে প্রস্তাবিত নগর আদালত আইনের সাথে সংযুক্ত না করা;
৫. প্রস্তাবিত নগর আদালতের এখতিয়ার বা ক্ষেত্র সমূহকে পুনরায় পর্যালোচনা করা;
৬. প্রস্তাবিত নগর আদালতে কি ধরনের মামলা আসতে পারে সে বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করা যাতে আইনে প্রাসঙ্গিক ধারা সংযুক্ত করা যায় এবং আইনের বিভিন্ন সংজ্ঞা সঠিক উপায়ে নির্ধারণ করা যায়;
৭. খসড়া আইনে উল্লেখিত বেশ কয়েকটি ধারা (যেমন: গবাদি পশু, নাবালকের স্বার্থ, বেআইনি সমাবেশ, পুরুষ কাউন্সিলর, সরকারি কর্মচারি, আদালত অবমাননা ইত্যাদি) পর্যালোচনা করা এবং এগুলোর যৌক্তিকতা যাচাই করা;
৮. সাংবাদিকদের জন্যে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা ইত্যাদি।
***